হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর জীবনী - পর্ব - ০২ঃ ইসলামের আবির্ভাবকালে আরবের ভৌগোলিক অবস্থা

আসসালামু অলাইকুম! আমরা মুসলমান, তাই আমাদের ইসলামিক জ্ঞান-ধারণা আমাদের সকলেরই জানা দরকার। তাই আমি নিয়ত করেছি যে, আমাদের প্রিয় ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর জীবনী সম্পর্কে ধারাবাহিকভাবে আপনাদের সামনে তুলে ধরবো। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর জীবনী - পর্ব - ০১ পর্বে নবী জীবনের সূচনা পর্ব হিসেবে আলোচনা করেছিলাম।
আর আজকে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর জীবনী - পর্ব - ০২ হিসেবে ইসলামের আবির্ভাবকালে আরবের ভৌগোলিক অবস্থা তুলে ধরবো। আমরা মুসলমান হিসেবে আমাদের সকলেরই হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর জীবন সম্পর্কে জানা জরুরী। তাই আমি আপনাকে ইসলামিক দাওয়াত হিসেবে এই আর্টিকেলটি পড়ার জন্য অনুরোধ করবো।

পেইজ কন্টেন্ট সূচিপত্রঃ হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর জীবনী - পর্ব - ০২ঃ ইসলামের আবির্ভাবকালে আরবের ভৌগোলিক অবস্থা

সিরাতুন্নবি এর জীবনচরিত

সিরাতুন্নবি তথা সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর জীবনচরিত বলতে বোঝায় মহান আল্লাহ তায়ালার বার্তা হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) মানব জাতির কাছে পোঁছে দিয়েছেন কথায়, কাজে ও জীবনের যাবতীয় ক্ষেত্রে। এই বার্তার মাধ্যমে তিনি পথভ্রষ্ট মানুষকে অন্ধকার থেকে শাশ্বত আলোর পথ দেখিয়েছেন।

ভৌগোলিক অবস্থান ও  জাতিগোষ্ঠী

হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর জীবনী এর মূল আলোচনার পূর্বে আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করা দরকার। তাই প্রাক ইসলামিক আরবের ভোগোলিক সীমারেখা, আরব ভূমিতে বসবাসরত বিভিন্ন সম্প্রদায়ের অবস্থা ও অবস্থান এবং তাদের ক্রমোন্নতির ধারা, তখনকার রাষ্ট্রপরিচালনা, নেতৃত্বপ্রদান, দ্বীন-ধর্ম, আচার-আচরণ, বিশ্বাস, চিন্তা-চেতনা, রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক সহ যাবতীয় নিখুঁত চিত্র আপনাদের সামনে তুলে ধরা হবে।

আরবের অবস্থান

“আরব” শব্দটির আভিধানিক অর্থ হচ্ছে ‘বালুকাময় প্রান্তর’ বা ‘ধূসর মরুভূমি’ বা ‘তৃণ-শস্যবিহীন অঞ্চল’। প্রাচীনকাল থেকেই আরব উপদ্বীপ ও সেখানকার বসবাসকারী সম্প্রদায়ের জন্য এ ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
আরবের পশ্চিমে রয়েছে লোহিত সাগর ও সিনাই উপদ্বীপ, পূর্বে আরব উপসাগর ও দক্ষিণ ইরাকের বড় একটি অংশ। আর দক্ষিণ দিকে রয়েছে আরব সাগর, যা ভারত মহাসাগরে বিস্তৃত। উত্তরে শ্যাম রাজ্য ও ইরাকের কিছু অংশ। অবশ্য উল্লেখিত সীমান্তসমূহের কোন কোন ক্ষেত্রে কিছুটা মতপার্থক্য রয়েছে। আর ভূ-ভাগের আয়তন ১০ থেকে ৩০ লক্ষ বর্গমাইল পর্যন্ত ধরা হয়।

ভৌগোলিক তাৎপর্য

ভৌগোলিক ও ভূপ্রাকৃতিক উভয় দৃষ্টিকোণ থেকেই আরব উপদ্বীপ অত্যন্ত গুরুত্ব ও তাৎপর্য বহন করে। কারণ, আরব উপদ্বীপ চারদিক থেকেই মরুভূমি বা দিগন্তবিস্তৃত বালুকাময় প্রান্তর দ্বারা পরিবেষ্টিত। এর ফলে আরব উপদ্বীপ এমন সুরক্ষিত দূর্গে পরিণত হয়েছে যে, কোন বহিঃশত্রুর পক্ষে এর উপর আক্রমণ করা, অধিকার প্রতিষ্ঠা করা খুবই কঠিন।

আর এ কারণেই আরব উপদ্বীপের অধিবাসীগণ সুপ্রাচীনকাল থেকেই সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে বসবাস ও নিজস্ব স্বাতন্ত্রবোধ বজায় রেখে চলে আসছে।

বহির্বিশ্বের দিক থেকে লক্ষ করলে আরব উপদ্বীপের অবস্থান প্রাচীন যুগের মহাদেশগুলোর একবারে মধ্যস্থল বা কেন্দ্রবিন্দুতে পড়ে। এর ফলে আরব উপদ্বীপটি জল-স্থল উভয় দিক থেকেই পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ও মহাদেশের সাথে সংযুক্ত।

আরব উপদ্বীপের উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত হচ্ছে আফ্রিকা মহাদেশে গমনের প্রবেশ পথ। উত্তর-পূর্ব সীমান্ত হচ্ছে ইউরোপ মহাদেশে প্রবেশের সিংহদ্বার। আর পূর্ব সীমান্ত হচ্ছে ইরান ও মধ্য এশিয়া হয়ে চীন-ভারতসহ অন্যান্ন দূর অনারবী দেশগুলোর সাথে সংযোগ পথ।

এভাবে সমূদ্রকে কেন্দ্র করে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ আরব উপদ্বীপের সাথে মিলিত হয়েছে। আর তাই বিভিন্ন দেশের জাহাজগুলো আরব বন্দরে গিয়ে ভিড়ে। এমন নৈসর্গিক ভৌগোলিক অবস্থার প্রেক্ষিতে আরব উপদ্বীপের উত্তর ও দক্ষিণ সীমান্ত ছিল বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লক্ষ্যস্থল, ব্যবসা-বাণিজ্য, সভ্যতা-সংস্কৃতি ও মত-বিনিময়ের কেন্দ্রস্থল।

আরব প্রজন্ম ও সম্প্রদায়সমূহ

ঐতিহাসিকগণ জন্মসূত্রের বিবেচনায় আরব সম্প্রদায় সমূহকে ৩টি শ্রেণিতে বিভক্ত করেছেন।
  • আরবে বায়দা
  • আরবে আরিবা
  • আরবে মোস্তারিবা ও ইব্রাহিম (আঃ)

আরবে বায়দা

আরবে বায়দা - এরা হল সেই সব ধ্বংসপ্রাপ্ত প্রাচীন আরব গোষ্ঠী, যারা পৃথিবীর বুক থেকে সম্পূর্ণরুপে নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল। এবং তাদের ইতিহাস সম্পর্কে জানার তেমন কোন নির্ভরযোগ্য তথ্য-প্রমাণও পাওয়া যায়নি। এ সম্প্রদায় গুলো হচ্ছে যথাক্রমে আদ, সামুদ, তাসম, জাদিস, ইমলাক, উমাইম, জুরহুম, হযুর, ওয়াবার, জাসিম, হাযরামাউত ইত্যাদি।

আরবে আরিবা

আরবে আরিবা - এরা হচ্ছে সেই সব গোত্র, যার ইয়ারুব বিন ইয়াশজুর বিন কাহতানের বংশোদ্ভুত। তাদেরকে ‘কাহতানি আরব’ বলা হয়।
আরবে আরিবা অর্থাৎ কাহতানি আরবদের প্রকৃত আবাসস্থল ছিল ইয়ামান রাজ্য। এখান থেকেই তাদের বংশধারা এবং গোত্রসমূহ বহু শাখা-প্রশাখায় বিভক্ত হয়।

আরবে মোস্তারিবা ও ইব্রাহিম (আঃ)

আরবে মোস্তারিবা হচ্ছে সেই আরব সম্প্রদায়, যারা হযরত ইসমাইল (আঃ) এর বংশধারা থেকে এসেছে। তাদেরকে ‘আদনানি আরব’ বলা হয়। তবে এদের প্রধান পূর্বপুরুষ ছিলেন হযরত ইব্রাহিম (আঃ)। তিনি মূলতঃ আরাকের ‘উর’ নামক শহরের বাসিন্দা ছিলেন। এই শহরটি ফোরাত নদীর তীরে কুফার সন্নিকটে অবস্থিত।

হযরত ইব্রাহিম (আঃ) উক্ত শহর থেকে ‘হাররান’ নামক শহরে হিজরত করেন। এরপর তিনি ফিলিস্তিনে গিয়ে বসবাস শুরু করেন ও সেখানে নবুয়তী কর্মকান্ডের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করেন। নবুয়তী দাওয়াত প্রচার-প্রসারের জন্য হযরত ইব্রাহিম (আঃ) এরপর মিশর গিয়ে বসবাস শুরু করেন।

যাইহোক, এই প্রসঙ্গে আরো অনেক ঘটনা আছে, যে গুলো আজ আর বলছিনা, বিস্তারিত পরের আরেকটি আর্টিকেলে আলোচনা করবো ইনশায়াল্লাহ।

শেষ কথা

প্রিয় পাঠক, শেষ কথা বলে কোন কথা বলা যাবে না। কারণ এখনো মূল আলোচনায় আমরা যেতে পারিনি। আজকে ইসলামের আবির্ভাবকালে আরবের ভৌগোলিক অবস্থা নিয়ে কিছু বিষয় তুলে ধরার চেষ্টা করেছি মাত্র।

একজন মুসলিম হিসেবে আমাদের সবারই ইসলামের কথাগুলো বিস্তারিত জানা দরকার। তাই তারই ধারাবাহিকতায় যে বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে, আশা করি, আপনার ভালো লাগবে।

আর এই পোস্টটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে, তাহলে অবশ্যই পোস্টটি শেয়ার করুন, যাতে অন্যরাও পড়ে উপকৃত হতে পারে। এতক্ষুণ আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ। লাইক, কমেন্ট ও সাবস্ক্রাইব করে আমাদের সাথেই থাকুন। (শওকত রাশেল)

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ওয়ানলাইফ আইটিরনীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url