খারাপ স্বপ্নের কারণ কি বিস্তারিত জেনে নিন

আসসালামু অলাইকুম। প্রিয় পাঠক, পোস্টের শিরোনাম দেখে নিশ্চয় বুঝতে পারছেন আজকের আলোচনার মূল বিষয়বস্তু কি? হুম, আমরা অনেকেই খারাপ  স্বপ্নের ভূক্তভোগী। তাই অনেকেই জানতে চান এই খারাপ স্বপ্নের কারণ কি? আর কেন খারাপ স্বপ্ন আসে?
খারাপ স্বপ্নের কারণ কি? দাঁত ঝড়েছে? হয়তো দেখছেন, মরুভূমির রাস্তায় একা হাঁটছেন, আকাশের অনেক উপর থেকে পড়ে যাচ্ছেন, কারো সাথে মারামারি করছেন, ঘুমের মধ্যে ঘুব ঘামছেন, আপনার গলাটা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে, পানির গ্লাসটি আপনার পাশের টেবিলেই আছে, কিন্তু আপনি নিতে পারছেন না। পাহাড় থেকে নিচে পড়ে যাচ্ছেন। কেন খারাপ স্বপ্ন আসে? তা জানতে আমাদের সাথেই থাকুন।

আপনি বাঁচার জন্য অনেক সাহায্য চাইছেন, কিন্তু কেউ আপনাকে সাহায্য করতে আসছে না, এক সময় আপনার ঘুম ভেঙ্গে দেখেন যে আপনি বিছানায় শুয়ে হাঁপাচ্ছেন। এতক্ষুণ যা আপনার সাথে হয়েছে, তা ছিল সবই আপনার দুঃস্বপ্ন।

যাই হোক, খারাপ স্বপ্নের কারণ কি? কেন খারাপ স্বপ্ন আসে? তার বিস্তারিত আলোচনায় চলে যায়। তাই খারাপ স্বপ্নের কারণ কি? কেন খারাপ স্বপ্ন আসে? তা জানতে এই পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়ুন।

পেইজ কন্টেন্ট সুচিপত্রঃ খারাপ স্বপ্নের কারণ কি বিস্তারিত জেনে নিন

খারাপ স্বপ্ন কি?

খারাপ স্বপ্ন হল একটি দুঃস্বপ্ন। আমরা সবাই কখনো না কখনো খারাপ স্বপ্ন দেখে থাকি। যদি এটা মাঝে মাঝে হয়, তাহলে এটি একটি স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু আপনি যদি প্রতিনিয়ত খারাপ স্বপ্ন দেখেই থাকেন, তাহলে তখন এটা একটি দুঃচিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আতঙ্ক বিরাজ করে মনের ভেতর।

আর এই দুঃচিন্তা ও আতঙ্ক আপনাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে দূর্বল করে দেবে। এরফলে আপনার নিয়মিত ঘুম হবে না। চোখের নিচে কালো দাগ পড়ে যাবে। আত্মবিশ্বাস হারিয়ে কাজে মনোযোগ দিতে পারবেন না।

খারাপ স্বপ্নের কারণ কি?

খারাপ স্বপ্নের কারণ কি? আমরা যখন ঘুমায়, তখন এই ঘুম কে তিনটি স্তরে ভাগ করা যেতে পারে। যেমন- ১ম পর্যায়ের ঘুমকে বল যায় স্লিপ আনসেট বা ঘুম ঘুম ভাব, ২য় পার্যায়ের ঘুমকে বলা যায় লাইট স্লিপ বা যাকে বলা যায় কাঁচা ঘুম, আর ৩য় পার্যায়ের ঘুমকে বলা যায় ডিপ স্লিপ বা গভীর ঘুম। আর আমরা যখন এই ৩য় পর্যায়ের ঘুমে ঘুমিয়ে থাকি, তখন আমরা বিভিন্ন স্বপ্ন দেখে থাকি। আর তা হয় কখনো ভালো, আর কখনো বা খারাপ দুঃস্বপ্ন।
কেন খারাপ স্বপ্ন আসে? আর এই ৩য় পর্যায়ের ঘুমের মধ্যে যখন আমরা ঘুমিয়ে থাকি, তখনই আমরা বিভিন্ন ধরণের খারাপ স্বপ্ন দেখে থাকি। সারাদিন যখন আমরা আমাদের কাজের ব্যস্ততা, ব্যর্থতা, দুঃচিন্তা নিয়ে অতিবাহিত করি। রাতের বেলায় এগুলোই আমাদের অবচেতন মনে দুঃস্বপ্ন হয়ে ভেসে আসে। এরপরও আরো কিছু কারণ আছে, যেগুলো খুব সংক্ষেপে নিচে আলোচনা করা হলঃ

ভয়ঙ্কর দৃশ্য বা সিনেমা দেখা

খারাপ স্বপ্নের কারণ কি? আর কেন খারাপ স্বপ্ন আসে? এর একটি কারণ হল কোন ভয়ঙ্কর কোন দৃশ্য দেখা। হতে পারে রাস্তায় কোন ভয়ঙ্কর কিছু দেখেছেন। হতে পারে ভয়ঙ্কর কোন সিনেমা দেখেছেন। যা দেখে আপনার বুকের ভেতর কেঁপে উঠেছিল। আর এই ভয়টাই আপনার ঘুমের মধ্যে দুঃস্বপ্ন হয়ে ভেসে আসে। কেন খারাপ স্বপ্ন আসে? নিশ্চয় বুঝতে পারছেন।

রাতে হরোর মুভি বা ভূতের মুভি দেখা

খারাপ স্বপ্নের কারণ কি? আপনি আপনার বেডরুমে রাতে একা আছেন। এমন সময় আপনি খুব মনোযোগ দিয়ে একটি হরোর বা ভয়ঙ্কর ভূতের মুভি দেখলেন। খুব ইনজয় করে মুভিটি দেখলেন। কিন্তু মুভি দেখার পর আপনি আর বাথরুমে একা যেতে পারছেন না, মনের ভেতর কেমন যেন ভয় ভয় লাগছে।

আর এই ভয় থেকেই আপনি যখন ডিপ স্লিপে থাকবেন, তখন আপনি কোন ভয়ঙ্কর দুঃস্বপ্ন দেখবেন। কেন খারাপ স্বপ্ন আসে? নিশ্চয় বুঝতে পারছেন।

ভয়ঙ্কর গল্পের বই পড়া

খারাপ স্বপ্নের কারণ কি? আর কেন খারাপ স্বপ্ন আসে? এর আরেকটি কারণ হিসেবে বলতে পারি যে, ভয়ঙ্কর কোন গল্পের বই পড়া। আপনি যদি নিয়মিত ভয়ঙ্কর গল্পের বই পড়তে ভালোবাসেন। তাহলে আপনার মনের ভেতর ঐ ভয়ঙ্কর ঘটনাগুলোই কাজ করবে।

আর তাই দুঃস্বপ্ন হিসেবে কখনো অনেক উঁচু জায়গা থেকে পড়ে যাচ্ছেন, বা আকাশে ডানা মেলে উড়ছেন, কখনো বা কেউ আপনাকে ধাক্কা দিয়ে উঁচু থেকে ফেলে দিল। আবার কখনো রক্তাক্ত কোন কিছু দেখছেন, বা কারো সাথে মারামারি করছেন। আর এই সব দুঃস্বপ্ন আসে আপনার অভ্যাস থেকে। আর তাই কেন খারাপ স্বপ্ন আসে? নিশ্চয় বুঝতে পারছেন।

আপনার সাথে ঘটে যাওয়া দিনের কিছু ঘটনা

খারাপ স্বপ্নের কারণ কি? আমরা সারাদিন কোন না কোন কাজে সবাই ব্যস্ত থাকি। এরই মাঝে হয়তো আপনার মনে কেউ কোন আঘাত দিল, বা লাঞ্ছিত করলো যা আপনার জন্য অনেক কষ্টের ছিল। এই ঘটনা গুলোই আপনার মনে চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

কেন খারাপ স্বপ্ন আসে? হুম, আপনার এই দুঃচিন্তা থেকেই আপনার ঘুমের মধ্যে খারাপ স্বপ্নগুলো দুঃস্বপ্ন হয়ে ভেসে আসে।

অনেক রাত পর্যন্ত জেগে থাকা

খারাপ স্বপ্নের কারণ কি? আর কেন খারাপ স্বপ্ন আসে? এর আরেকটি কারণ হল অনেক রাত পর্যন্ত জেগে থাকা। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে না ঘুমানো। যখন আপনার ঘুম কম হবে, তখন  আপনার মস্তিস্কে অনেক কিছু কাজ করে। আর তাই এ থেকেও আপনার ঘুমের মধ্যে আপনি খারপ স্বপ্ন দেখে থাকেন।

নেশা জাতীয় দ্রব্য বা অ্যালকোহল পান করা

খারাপ স্বপ্নের কারণ কি? আর কেন খারাপ স্বপ্ন আসে? এর আরেকটি কারণ হল নেশা জাতীয় দ্রব্য বা অ্যালকোহল পান করা। নেশা জাতীয় দ্রব্য বা অ্যালকোহল পান করলে আপনার ঘুমের বাধা হয়ে দাঁড়াবে।

এগুলো আপনার ঘুমের মধ্যে আপনার ব্রেণকে আরো বেশি সক্রিয় রাখে। আর এ থেকেও আপনি খারাপ স্বপ্নের ভুর্ক্তভোগী হন।

অপবিত্র হয়ে ঘুমানো

খারাপ স্বপ্নের কারণ কি? আর কেন খারাপ স্বপ্ন আসে? এর আরেকটি বড় কারণ হল অপবিত্র অবস্থায় ঘুমানো। আপনি হয়তো কখনো প্রসাব করেছেন, কিন্তু পবিত্রতা অর্জন করেন নাই। কিংবা ঘুমের মধ্যে আপনার স্বপ্নদোষ হয়েছে।

কিংবা সঙিনীর সাথে শুয়েছেন, কিন্তু ফরজ গোসল করেন নাই। এমন অবস্থায় যদি আপনি ঘুমিয়ে পড়েন, তাহলে শয়তান অবশ্যই আপনার উপর ভর করবে। আর আপনি তখন কোন খারাপ দুঃস্বপ্ন দেখবেন।

প্রিয়জনের বিচ্ছেদ

খারাপ স্বপ্নের কারণ কি? আর কেন খারাপ স্বপ্ন আসে? এর আরেকটি বড় কারণ হল প্রিয়জনের বিচ্ছেদ। প্রিয়জনদের বিচ্ছেদ আমরা কেউ সহজে মেনে নিতে পারি না। প্রিয়জনকে হারানোর ভয় খুব বড় একটি কারণ।

আমরা প্রিয়জনকে এত বেশি ভালোবাসি যেন মনে হয় তাকে ছেড়ে থাকা সম্ভব নয়। তাই প্রিয়জনকে নিয়ে অনেক সময় আমরা বিভিন্ন ধরণের দুঃস্বপ্ন দেখে থাকি।

শেষ কথা

প্রিয় পাঠক, খারাপ স্বপ্নের কারণ কি? আর কেন খারাপ স্বপ্ন আসে? তা নিশ্চয় আপনার কাছে পরিস্কার হয়ে গেছে। আপনি যদি এই সব দুঃস্বপ্ন থেকে বাঁচতে চান, তাহলে সর্ব প্রথমে আপনার অভ্যাস পরিবর্তন করতে হবে। হরোর মুভি দেখা কিংবা ভয়ঙ্কর গল্পের বই পড়া বন্ধ করতে হবে। দিনের ঘটে যাওয়া খারাপ ঘটনাগুলোকে বার বার স্মরণ করা থেকে বের হয়ে আসতে হবে।

রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে ওযু করে পবিত্র হয়ে শুতে হবে। ঘুমানোর আগে কিছু দোয়া-দুরুজ মনে মনে পাঠ করতে হবে। পাশে যদি আপনার মোবাইল ফোন থাকে, তাহলে এটিকেও আপনার ভালো কাজে লাগাতে পারেন। যেমন- মোবাইল থেকে কিছু মধুর কন্ঠের কুরআন তেলাওয়াত শুনতে পারেন। 

মোবাইল থেকে আপনি সূরা-আর রহমান, সূরা-মূলক, সূরা-কাহফ, সূরা-ইয়াসিন, সূরা-মারইয়াম, সূরা-ওয়াকিয়া, সূরা-মুহাম্মদ, সূরা-কিয়ামাহ, সূরা-আল হাদীদ, সূরা-ত্বোয়া-হা এই সূরা গুলোর তেলাওয়াত শুনতে পারেন। এই সূরা গুলো শুনলে আপনার মন যেমন শান্ত হবে, তেমনি আপনি খুব সুন্দর একটা ঘুম দিতে পারবেন।  আর আপনি পবিত্র হয়ে থাকলে শয়তান আপনাকে আক্রমণ করতে পারবে না। ফলে কোন দুঃস্বপ্ন আর আসবে না ইনশায়াল্লাহ।

প্রিয় পাঠক, এতক্ষুণ যা আলোচনা করলাম, তা ছিল সবই আমার সাথে ঘটে যাওয়া বাস্তব ঘটনা যদিও আমি আজ অবদি কোন নেশা জাতীয় দ্রব্য বা অ্যালকোহল পান করি নাই। এই দুঃস্বপ্ন গুলো আমার সাথে প্রায়ই ঘটে থাকে। আমার এই আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে, তাহলে অবশ্যই এই পোস্টটি শেয়ার করুন, যাতে অন্যেরাও পড়ে উপকৃত হতে পারে। 
(শওকত রাশেল)

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ওয়ানলাইফ আইটিরনীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url