দুরুদ শরীফের গুরুত্ব ও ফজিলত pdf - দুরুদ শরীফ পড়লে কি হয়

আসসালামু আলাইকুম! প্রিয় পাঠক, দুরুদ শরীফ নিয়ে আমাদের মাঝে অসংখ্য প্রশ্ন জাগে। বিভিন্ন চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খায়। আর এই সবের সমাধান খঁজতে গিয়ে আমরা বরকতময় ফজিলত থেকে বঞ্চিত হই। তাই দুরুদ শরীফ পড়লে কি হয় - দুরুদ শরীফের গুরুত্ব ও ফজিলত নিয়ে থাকছে আজকের আলোচনার মূল বিষয়বস্তু।
নামাজের দুরুদ শরীফ আরবি, দুরুদ শরীফের বাংলা উচ্চারণ, দুরুদ শরীফের অর্থ, ‍দুরুদ শরীফ কখন পড়তে হয়, দুরুদ শরীফের আমল, তারাবি নামাজের দুরুদ শরীফ, জানাজার নামাজের দুরুদ শরীফ ও আরো অনেক বিষয় থাকছে আজকের আলোচনায়। একজন মুসলমান হিসেবে আমাদের এই সকল বিষয়গুলো জানা খুব জরুরী।

পেইজ কন্টেন্ট সূচিপত্রঃ দুরুদ শরীফের আমল - দুরুদ শরীফের গুরুত্ব ও ফজিলত

দুরুদ শরীফের গুরুত্ব ও ফজিলত

দুরুদ শরীফের গুরুত্ব ও ফজিলত অনেক। আল্লাহ পাক পবিত্র কুরআনে এরশাদ করেছেন-

إِنَّ اللَّهَ وَمَلَائِكَتَهُ يُصَلُّونَ عَلَى النَّبِيِّ يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا صَلُّوا عَلَيْهِ وَسَلِّمُوا تَسْلِيمًا

অর্থঃ “নিশ্চয় আমি (আল্লাহ) স্বয়ং এবং আমার ফেরেস্তাগণ নবী করীম (সাঃ) এর উপর দুরুদ পাঠ পূর্বক সালাম প্রেরণ করিয়া থাকি; হে মুমিনগণ তোমরাও তাঁহার উপর দুরুদ পাঠ কর এবং সালাম প্রেরণ কর।” (সূরাঃ আহযাব, আয়াত-৫৬)

যেহেতু আল্লাহপাক দুরুদ পাঠ করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন, তাই আমাদের জীবনে দুরুদ পাঠ করা ফরজ। আর এজন্য যখনই আমরা নবী করীম (সাঃ) এর নাম উচ্চারণ করি বা অন্য কেউ নবী করীম (সাঃ) এর নাম উচ্চারণ করে, তখন তাঁর উপর দুরুদ পাঠ করা ওয়াজিব।

দুরুদ শরীফের ফজিলত হাদিস

আসুন দুরুদ শরীফের ফজিলত হাদিস নিয়ে কিছু কথা বলা যাক। দুরুদ শরীফ সমূহ পাঠ করা খুব গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। তাই দুরুদ শরীফের ফজিলত pdf জানতে এই পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়ুন।

দুরুদ শরীফ পাঠ করা নিয়ে ও দুরুদ পাঠের ফজিলত নিয়ে আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেছেন, “যে ব্যক্তি আমার উপর একবার দুরুদ পাঠ করবে, বিনিময়ে তার উপর আল্লাহ তায়ালা দশটি রহমত নাজিল করবেন।” (সহিহ মুসলিম ১/১৬৬, জামে তিরমিযী ১/১০১)

দুরুদ শরীফের গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে অন্য আরেকটি হাদিসে আছে, হজরত আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী কারিম (সাঃ) এরশাদ করেছেন,“যে ব্যক্তি আমার উপর একবার দুরুদ পাঠ করবে, এর বিনিময়ে  তার উপর আল্লাহ তায়াল দশটি রহমত নাজিল করবেন, তার দশটি গুনাহ ক্ষমা করা হবে ও দশটি দরজা বুলন্দ হবে।” (সুনানে নাসায়ী ১/১৪৫, মুসনাদে আহমদ ৩/১০২, মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ২/৪৩)

দুরুদ শরীফ পড়লে কি হয়

আসুন এবার জেনে নিই দুরুদ শরীফ পড়লে হি হয় ও দুরুদ শরীফ কখন পড়তে হয়। হজরত আমের েইবনে রবীআহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেছেন, “আমার উপর দুরুদ পাঠকারী যতক্ষুণ দুরুদ পড়ে, ফেরেশতারা তার জন্য দোয়া করতে থাকে। সুতরাং বান্দার ইচ্ছা, সে দুরুদ বেশি পড়বে না কম।” (মুসনাদে আহমদ ৩/৪৪৫, মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ৬/৪০, সুনানে ইবনে মাজাহ, হাঃ ৯০৭)

দুরুদ শরীফ পড়লে কি হয় তা নিয়ে আরেক হাদিসে আছে, রুওয়াইফি ইবনে সাবিত আল আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেছেন, “যে ব্যক্তি এ দুরুদ পাঠ করবে, তার জন্য আমার সুপারিশ অবধারিত হয়ে যাবে।” (আল মুজামুল কাবীর, তবারানী ৫/৪৪৮১, মাজমাউজ যাওয়াইদ ১০/২৫৪)
কিয়ামতের দিন যারা নবীজি (সাঃ) এর সবচেয়ে কাছে থাকবে বা কিয়ামতের দিন নবীজির কাছাকাছি থাকবেন যে ব্যক্তি সে সম্পর্কে আরেক হাদিসে আছে-

আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেছেন, “কিয়ামতের দিন ঐ ব্যক্তি আমার সবচেয়ে নিকটবর্তী হবে, যে আমার উপর সবচেয়ে বেশি দুরুদ পাঠ করেছে।” (জামে তিরমিজি ১/১১০)

দুরুদ শরীফের ফজিলত ও ঘটনা

প্রিয় পাঠক, আসুন এবার আমরা জেনে নিই দুরুদ শরীফের ফজিলত ও ঘটনা সম্বন্ধে। দুরুদ শরীফের ফজিলত pdf অনেক। দুরুদ শরীফের ঘটনা নিয়ে আজ আমি আপনাদের কাছে হাদিসের আলোকে কিছু আলোচনা করবো ইনশায়াল্লাহ!

হযরত কাব বিন উজরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসলে কারীম (সাঃ) সাহাবায়ে কেরামকে বললেন তোমরা মিম্বারের নিকটবর্তী হও। তখন আমরা সেখানে হাজির হলাম। রাসূল (সাঃ) যখন মিম্বারের সিঁড়িতে পা রাখলেন, তখন বলে উঠলেন “আমিন”।

আবার যখন তিনি মিম্বারের দ্বিতীয় সিঁড়িতে পা রাখলেন, তখনও তিনি বলে উঠলেন “আমিন”। আবার যখন তিনি মিম্বারের তৃতীয় সিঁড়িতে পা রাখলেন, তখনও আবার তিনি বলে উঠলেন “আমিন”। আমরা তখন জিজ্ঞেস করলাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আজ আমরা আপনার নিকট থেকে এমন কিছু শুনলাম, যা এর আগে কোনদিন  শুনিনি।

রাসূল (সাঃ) তখন বললেন, “আমার নিকট হযরত জিব্রাঈল (আঃ) এসেছিলেন। আমি যখন মিম্বারের প্রথম সিঁড়িতে পা রাখলাম, তখন হযরত জিব্রাঈল (আঃ) বললেন - ‘সে ব্যক্তি ধ্বংস হোক, যে ব্যক্তি রমজান মাস পাওয়ার পরেও নিজের গুনাহ মাফ করতে পারেনি’। আমি তখন ‘আমিন’ বললাম।”

রাসূল (সাঃ) আরো বললেন, “আমি যখন মিম্বারের দ্বিতীয় সিঁড়িতে পা রাখলাম, তখন জিব্রাঈল (আঃ) দোয়া করলেন, ‘সেই ব্যক্তি ধ্বংস হোক, যার সম্মুখে আপনার নাম উচ্চারণ  করা হলো, অথচ সে আপনার দুরুদ শরীফ পাঠ করলো না’। তখন আমি বললাম ‘আমিন’।”

রাসূল (সাঃ) আরো বললেন, “আমি যখন মিম্বারের তৃতীয় সিঁড়িতে পা রাখলাম, তখন জিব্রাঈল (আঃ) দোয়া করলেন, ‘সেই ব্যক্তি ধ্বংস হোক, যে মাতা-পিতা উভয়কে বা একজনকে বৃদ্ধাবস্থায় পেলো, অথচ তাদের সেবা করে জান্নাতবাসী হতে  পারলোনা।’ তখন আমি বললাম ‘আমিন’।” (হাকীম - বুখারী)

প্রিয় পাঠক, উক্ত হাদিস থেকে এই কথা প্রমাণিত হয় যে, যারা রাসূল (সাঃ) এর উপর দুরুদ শরীফ পাঠ করে না, তাদের উপর রাসূল (সাঃ) ও জিব্রাঈল (আঃ) এর বদ দোয়া রয়েছে। তাদের জন্য দুনিয়া ও আখিরাতে ধ্বংসের জন্য এটি একটি ভয়ংকর ক্ষতিকর পরিণাম।

আর তাই কুরআন - হাদিসের আলোকে উলামায়ে কেরামগণ বলেছেন, জীবনে অন্ততঃ একবার হলেও দুরুদ শরীফ পাঠ করা ফরজ। আর সকল প্রকার নামাজের তাশাহুদে নবীর উপর দুরুদ শরীফ পাঠ করা ওয়াজিব।

নামাজের দুরুদ শরীফ - নামাজের দুরুদ শরীফ আরবি

দুরুদে ইব্রাহিম আরবি বা নামাজের দুরুদ শরীফ বা নামাজের দুরুদ শরীফ আরবি ও নামাজের দুরুদ শরীফ বাংলা উচ্চারণ নিচে দেওয়া হলোঃ

اَللّهُمَّ صَلِّ عَلى مُحَمَّدٍ وَّعَلى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلى إِبْرَاهِيْمَ وَعَلى آلِ إِبْرَاهِيْمَ إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَجِيْدُ، اَللّهُمَّ بَارِكْ عَلى مُحَمَّدٍ وَّعَلى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلى إِبْرَاهِيْمَ وَعَلى آلِ إِبْرَاهِيْمَ إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَّجِيْدٌ।

durood sharif in bangla - দুরুদে ইব্রাহিম এর বাংলা উচ্চারণ বা দুরুদ শরীফের বাংলা উচ্চারণ “আল্লা-হুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিউঁ ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদিন কামা সাল্লাইতা আলা ইব্রাহিমা ওয়া আলা আলি ইব্রাহিমা ইন্নাকা হামিদুম মাজিদ। আল্লা-হুম্মা বারিক আলা মাহাম্মাদিউঁ ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদিন কামা বারাকতা আলা ইব্রাহিমা ওয়া আলা আলি ইব্রাহিমা ইন্নাকা হামিদুম মাজিদ।” (সুনানে নাসায়ি, হাঃ ১২৯১)

দুরুদ শরীফের বাংলা অর্থ 

দুরুদে ইব্রাহিমের অর্থ বা দুরুদ শরীফের অর্থঃ “হে আল্লাহ! আপনি (আপনার নিকটস্থ উচ্চসভায়) মুহাম্মাদকে সম্মানের সাথে স্মরণ করুন এবং তাঁর পরিবার-পরিজনকে, যেমন আপনি সম্মানের সাথে স্মরণ করেছেন ইব্রাহিম ও তাঁর পরিবার-পরিজনদেরকে। নিশ্চয় আপনি অত্যন্ত প্রশংসিত ও মহা-মহিমান্বিত। হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মাদ ও তাঁর পরিবার-পরিজনের উপর বরকত নাজিল করুন, যেমন আপনি বরকত নাজিল করেছিলেন ইব্রাহিম ও তাঁর পরিবার-পরিজনের উপর। নিশ্চয় আপনি অত্যন্ত প্রশংসিত ও মহা-মহিমান্বিত।
প্রিয় পাঠক, দুরুদ শরীফ কখন পড়তে হয়, দুরুদ শরীফের আমল, তারাবি নামাজের দুরুদ শরীফ এই সব বিষয় নিয়ে আরেক দিন লিখবো। কারণ পোস্টটি অনেক বড় হয়ে গেছে।

শেষ কথা

প্রিয় পাঠক, দুরুদ শরীফ পাঠ করা ও নামাজের মধ্যে দুরুদ শরীফ পাঠ করা অত্যন্তু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। নামাজের শেষ বৈঠকে এই দুরুদ পাঠ করতে হয়। এটি নামাজের একটি খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ হিসেবে বলা যায়।

সকল সমস্যা ও জান্নাতে যাওয়ার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হলো দুরুদ শরীফ পাঠ করা। তাই সকলেই দুরুদ শরীফ পাঠ করবেন ও অন্যদেরকেও শেখাবেন। ফলে নিজেও জান্নাতে যাওয়ার পথ পাবেন আর অন্যকেউ জান্নাতের পথ দেখিয়ে তার জন্য জান্নাতে যাওয়ার পথ সহজ করে দিবেন।

শেষ কথা হিসেবে বলতে চাই, আজকের আলোচনায় যথাসম্ভব সঠিক তথ্য নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। এর পরেও যদি কোন ভূল-ত্রুটি হয়ে থাকে, তাহলে দয়াকরে ভূলটি দেখিয়ে তা সংশোধোনের সুযোগ করে দিন।

আর আমাদের এই পোস্টটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে, তাহলে দয়াকরে শেয়ার করুন, যাতে অন্যেরাও পড়ে উপকৃত হতে পারে। ধন্যবাদ। (শওকত রাশেল)

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ওয়ানলাইফ আইটিরনীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url